সময় সংবাদ লাইভ রিপোর্ট :অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নানা কারণে জনপ্রশাসনে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা দূর করা সম্ভব হয়নি। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে বদলি-পদায়ন নিয়ে চলছিল স্থবিরতা। বিশেষ করে বদলি-পদোন্নতিতে ফ্যাসিবাদের দোসরদের পুনর্বাসনসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ আসতে শুরু করে। অবস্থা এতটাই প্রকট আকার ধারণ করে যে, খোদ সচিব পদে প্রজ্ঞাপন জারির পরও কাজে যোগদান করতে দেওয়া হয়নি দুজনকে। আবার বিতর্কিত ব্যক্তিকে পদায়ন এবং সচিবের প্রজ্ঞাপন জারির পর বিতর্ক ওঠায় ওএসডি করার ঘটনাও ঘটেছে। জেলা পর্যায়েও বিভিন্ন পদায়নে অরাজকতার অভিযোগ এসেছে। অবশেষে জনপ্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরাতে তৎপর হয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সচিব নিয়োগ দিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে নির্বাচনী মাঠ প্রশাসন ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, শূন্য থাকার তিন সপ্তাহ পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সচিব নিয়োগ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সিনিয়র সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মো. এহছানুল হক। তিনি এত দিন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে সিনিয়র সচিব হিসেবে চুক্তিতে ছিলেন। তাঁকে চুক্তিভিত্তিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আনা হয়েছে। গতকাল রবিবার এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। একই দিনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ একাধিক মন্ত্রণালয়ে সচিব পদে নতুন দায়িত্বের প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব (আইএমইডি) কামাল উদ্দিনকে ধর্মসচিব এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংযুক্ত সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়েরকে জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমির (এনএপিডি) সিনিয়র সচিব করা হয়েছে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব ছিলেন। এ ছাড়া এনএপিডির মহাপরিচালক (সচিব) সিরাজুন নূর চৌধুরীকে আইএমইডির সচিব করা হয়েছে। গতকাল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস
রোম সফরে গেছেন। এ দিনেই বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে সচিব পদে রদবদলের খবর এলো।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সচিব পদে মো. মোখলেস উর রহমানকে নিয়োগ দেয়। চুক্তিতে দুই বছরের জন্য তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। গত ২১ সেপ্টেম্বর তাঁকে বদলি করে পাঠানো হয় পরিকল্পনা কমিশনে। এরপর থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সচিবের পদটি ফাঁকা ছিল। এ কারণে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বদলি, নিয়োগ ও পদোন্নতির কাজ প্রায় স্থবির হয়ে পড়ে। আটকে থাকে কিছু আর্থিক বিষয়ও। এই সময়ে একজন অতিরিক্ত সচিব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে রুটিন দায়িত্ব পালন করছিলেন। গতকাল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সচিব পদে নিয়োগ পেলেন ১৯৮২ বিসিএস ব্যাচের কর্মকর্তা মো. এহছানুল হক। এর আগে অন্তর্বর্তী সরকার তাঁকে চুক্তিভিত্তিতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব করেছিল।
দায়িত্ব নিয়েই নতুন জনপ্রশাসন সচিব মো. এহছানুল হক বলেছেন, গত তিন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা যেভাবে নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন, আসছে নির্বাচনে সেটা কোনোভাবেই হবে না। তিনি বলেন, প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদে দায়িত্ব পালন করা চ্যালেঞ্জের। পাশাপাশি নির্বাচন পরিচালনাও একটা চ্যালেঞ্জের কাজ। কমিশন সহায়তা করলে সেই চ্যালেঞ্জ সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে পারব। নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তারা যাতে সব সমালোচনার ঊর্ধ্বে থাকেনÑ এমন নির্দেশনা থাকবে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য। এবারের নির্বাচনে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা রাজনৈতিকভাবে কাজ করবে নাÑ এটা আমার বিশ্বাস। যদি কেউ রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকে কাজ করতে না পারেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে এবারের নির্বাচন একটি সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তিন সপ্তাহ ধরে সচিবালয়ে গুঞ্জন ছড়িয়েছিলÑ জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব পদ ঘিরে ভেতরে ভেতরে চলছে তীব্র টানাপড়েন। দুটি রাজনৈতিক দলের সমর্থক-কর্মকর্তারা চাইছিলেন তাঁদের পছন্দের কেউ যেন এই পদে বসেন। কারণ, জেলা প্রশাসকসহ মাঠ প্রশাসন ও অন্যান্য পর্যায়ের বদলি-পদোন্নতির মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসে এই মন্ত্রণালয় থেকে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে নতুন করে আরও আরেকটি বড় ধরনের রদবদল করেছে সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এপিডি) এরফানুল হককে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়েছে। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন খুলনার বিভাগীয় কমিশনার ফিরোজ সরকার।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জনপ্রশাসনের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগে (এপিডি) দক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগের প্রত্যাশা ছিল। এতদিন খুলনার বিভাগীয় কমিশনারের দায়িত্ব পালন করা ফিরোজ সরকারকে এপিডি উইংয়ের দায়িত্ব দেওয়ার পর কর্মকর্তারা জানান, স্বচ্ছ ইমেজের এ কর্মকর্তা নিষ্ঠার সঙ্গে প্রশাসন সাজাতে ভূমিকা রাখতে পারবেন। দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার সুনাম রয়েছে ফিরোজ সরকারের। যুগ্ম সচিব হওয়ার পরও ২০ জেলায় এখনও আগের জেলা প্রশাসকরা রয়ে গেছেন। কোথায় কাকে দায়িত্ব দেওয়া যৌক্তিক হবেÑ এ নিয়ে টানাপড়েন চলছিল। একই অবস্থা ইউএনও, এসি ল্যান্ডসহ মাঠ প্রশাসনে। এবার জনপ্রশাসনে সিনিয়র সচিব ও এপিডি উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব পদে দক্ষ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়ার মাধ্যমে প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টা করছে অন্তর্বর্তী সরকার।